ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

২৬ ঘন্টার অভিযানে

চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বদরখালী সেতুর  নিচে প্যারাবনে তুলে নিয়ে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় টানা ২২ ঘন্টা চিরুনি অভিযান চালিয়ে মহেশখালী উপজেলার পাহাড়ি জনপদের একটি চিংড়ি ঘের  এবং বদরখালীর সমুদ্র লাগোয়া চিংড়িজোন থেকে চকরিয়া থানা পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে।
সোমবার সকাল ১০ টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার  বিকাল দুইটা পর্যন্ত টানা ২৬ ঘন্টা চকরিয়া উপকুলের বদরখালী ও পাশের মহেশখালী উপজেলার শাপলা পুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ধর্ষণকাণ্ডের এসব নরপিশাচকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি মো: মনজুর কাদের ভূইয়া।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন বদরখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাজারপাড়া এলাকার জিয়াবুল করিমের ছেলে  তাজুল ইসলাম (১৮), একই এলাকার নুরুল আফসার এর ছেলে  সজীব (২৫), টুটিয়াখালী পাড়া এলাকার বশির আহমদ এর ছেলে ছোটন প্রকাশ চোরা ছোটন (২৫), একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দাতিনাখালী এলাকার আবু ছালেহ এর ছেলে অমিত হাসান (২৫), বদরখালী  ইউনিয়ননের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের  কলেজপাড়ার মো. ইছহাকের ছেলে মো. কাজল (২৩),একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেমুশিয়া পাড়ার আবদুল সোবহানের ছেলে
মোঃ শাহজাহান (২৮) ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড টুটিয়াখালী পাড়ার মো. বশির (৪৫)।
থানা পুলিশ জানায়, ভিকটিম ওই কিশোরী গত রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে বাঁশখালী বোনের  বাড়ি থেকে মহেশখালী নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এসময় রাত ১০ টার দিকে বদরখালী সেতু এলাকা ফেরীঘাট থেকে মহেশখালীগামী একটি  সিএনজি অটোরিকশায় উঠে। পরে সেতুর উপর গিয়ে গাড়ি নষ্ট হওয়ার অযুহাত দেখিয়ে চালক অটোরিকশা থেকে নামিয়ে  দেয়। এ সময় চার যুবক মুখ চেপে ধরে ভয় দেখিয়ে সড়কের পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন প্যারাবনে নিয়ে যায়। পরে ৭/৮ যুবক মিলে ওই কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
এ অবস্থায় কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে জ্ঞান  ফিরলে সে সড়কে এসে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে তাকে উদ্ধার করে তাকে প্রথমে বদরখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে রাত একটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এএসপি মো: রাকিব উর রাজা ও চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূইয়া ওই কিশোরীকে চকরিয়া  উপজেলা স্বাস্থ্য  কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে।
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, ধর্ষণকাণ্ডের এ ঘটনার পর জড়িত বখাটে সন্ত্রাসীরা পাশের মহেশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এরইমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সোর্স মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো: রাকিব উর রাজা ও চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূইয়ার নেতৃত্বে পুলিশ টিমের সদস্যরা মহেশখালীর পাহাড় লাগোয়া একটি চিংড়ি ঘেরে রুদ্ধদ্বার অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ ঘটনায় সরাসরি জড়িত চারজন বখাটে সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর আগেরদিন সোমবার অভিযান চালিয়ে বদরখালী সমুদ্র লাগোয়া চিংড়িজোনের এরিয়া থেকে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর  কাদের ভুঁইয়া  বলেন,  দুইদিনে টানা ২৬ ঘন্টা রুদ্ধদ্বার অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং সন্দেহভাজন মিলিয়ে মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রথমে গ্রেফতার করা তিনজনকে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সৌপদ্দ করা হয়। এসময়  আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওসি বলেন, গতকাল বিকালে মহেশখালী উপজেলার একটি চিংড়ি ঘের থেকে গ্রেফতার করা অপর চারজনকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করতে এবং ঘটনার বিস্তারিত ক্লু উদঘাটনে প্রয়োজনে আদালতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

পাঠকের মতামত: